বাংলাদেশের প্রাচীন শিল্পকলার পরিচয় পাঠ ২

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় শিল্পকলার পরিচয় পাঠ ২ ,যা বাংলাদেশের প্রাচীন শিল্পকলা ও ঐতিহ্যের পরিচয় অধ্যায় এর অন্তর্ভুক্ত।

বাংলাদেশের প্রাচীন শিল্পকলার পরিচয় পাঠ ২

গত কয়েক হাজার বছর ধরে বাংলা অঞ্চল কখনো গোটা অঞ্চল কখনো ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে বিভক্ত হয়ে ভিন্ন ভিন্ন রাজা ও শাসকদের দ্বারা শাসিত হয়েছে। এক অঞ্চলের সাথে অন্য অঞ্চলের রেষারেষি ও যুদ্ধবিগ্রহ সব সময় লেগেই ছিল।

পরাজিত অঞ্চলে লুট করা, জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেয়া, ধ্বংস করে দেয়া এসব স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। তাই কোনো কোনো অঞ্চল বিরান অর্থাৎ মানবশূন্য হয়ে যেত। দীর্ঘকাল বিরান থেকে একসময় মাটিচাপা পড়ে যেত। ঝড়ঝঞ্ঝা ও ভূমিকম্পের কারণেও এরকম মাটিচাপা পড়ে যেত।

 

বাংলাদেশের প্রাচীন শিল্পকলার পরিচয় পাঠ ২

 

বাংলাদেশে মাটির স্তূপ ও গড় অঞ্চল খনন করে এরূপ কয়েকটি জনপদের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে। এগুলো হলো রাজশাহী অঞ্চলে পাহাড়পুর, কুমিল্লার ময়নামতি, বগুড়ার মহাস্থানগড়, নরসিংদী জেলার ওয়ারী বটেশ্বর এর প্রাচীন সভ্যতা এবং সর্বশেষ আবিষ্কৃত মুন্সিগঞ্জ জেলার টংগীবাড়ী উপজেলার নাটেশ্বর সভ্যতা।

দীর্ঘদিন মাটিচাপা থেকে অনেক কিছুই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। পাওয়া গিয়েছে কিছু লোহা ও তামার হাতিয়ার, হাঁড়ি-পাতিল, মূর্তি, পোড়ামাটির ভগ্নপাত্র, ফলকচিত্র, পাথরের মূর্তি, পাথরের ফলকচিত্র, শিলালিপি বা পাথরে উৎকীর্ণ লেখা, ফরমান, খিলান, স্তন্ত, পিলার, ভগ্নদশায় ভবন ও ঘরবাড়ির কাঠামো, সে-সময়ে ব্যবহৃত মুদ্রা ও অলংকার।

আর এসব বস্তুই বাংলা অঞ্চলের প্রাচীন শিল্পকলা ও স্থাপত্যের কিছু নিদর্শন। ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবন ও বাড়িঘরের খিলান, স্তঙ্ক, দেয়াল ভিত্তি ও কাঠামো থেকে প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন বুঝে নিতে পারি।

চিত্রকলা ও নরম উপাদানে তৈরি কোনো শিল্পকর্ম এতদিন মাটির নিচে ও ঝড়ঝঞ্জায় রক্ষা পাওয়ার কোনো উপায় নেই। রক্ষা পেয়েছে ক্ষয়ে যাওয়া লোহা, তামা, সোনা-রুপা, পাথর ও পোড়ামাটির কিছু দ্রব্য। আগেই উল্লেখ করেছি সেগুলো সংগ্রহ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে বিভিন্ন জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

 

বাংলাদেশের প্রাচীন শিল্পকলার পরিচয় পাঠ ২

 

বাংলাদেশের প্রাচীন শিল্পকর্মের মধ্যে শিল্পনৈপুণ্যে ও কারুকাজে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো কষ্টিপাথর বা কালো পাথরে তৈরি মূর্তি। এই বিখ্যাত মূর্তিগুলো ঢাকায় জাতীয় জাদুঘরে ও বরেন্দ্র জাদুঘরে গেলে দেখা যায়।

পোড়ামাটির ফলকচিত্র, পাথরে খোদাই করা ফলক ও শিলালিপি বিখ্যাত প্রাচীন শিল্পকর্ম। মাটি খুঁড়ে যেগুলো পাওয়া গিয়েছে সেগুলো বিভিন্ন জাদুঘরে রয়েছে। ঐতিহ্যবাহী সেরূপ ফলক এখনও অনেক পুরোনো ইমারতে, মসজিদের দেয়ালে, মন্দিরের দেয়ালে শোভা পাচ্ছে।

এরূপ ফলকচিত্র্যমণ্ডিত বিখ্যাত ইমারতগুলো হলো- রাজশাহীর ছোট সোনা মসজিন, বাঘা মসজিদ, কুসুম্বা মসজিদ, পুঠিয়ার রাজবাড়ির মন্দির, খুলনার বাগেরহাটে ষাট গম্বুজ মসজিদ, খান জাহান আলীর মসজিদ এগুলো প্রাচীন স্থাপত্যকলার নিদর্শন হিসেবেও উল্লেখযোগ্য।

এরূপ আরও কিছু প্রাচীন স্থাপত্য শিল্পের নিদর্শন হলো, ঢাকার বড় কাটরা, ছোট কাটরা, লালবাগের দুর্গ, বিনত বিবির মসজিদ, খান মোহাম্মদ মৃধার মসজিদ, ঢাকেশ্বরী মন্দির, তারা মসজিদ, আহসান মঞ্জিল,

সাতগম্বুজ মসজিদ, নারায়ণগঞ্জের হাজিগঞ্জ দুর্গ, সোনাকান্দা দুর্গ, মুন্সীগঞ্জের ইদ্রাকপুর দুর্গ, পাবনার জোড়বাংলা মন্দির, ফরিদপুরের মথুরাপুর দেউল, জোড়বাংলা মন্দির, কিশোরগঞ্জ এর এগারো সিন্দুর

 

বাংলাদেশের প্রাচীন শিল্পকলার পরিচয় পাঠ ২

 

সাদী মসজিদ, শাহ্ মোহাম্মদ মসজিদ, সিলেট শাহ জালালের মাজার, শাহ পরানের মাজার, জয়ন্তীয়াপুর মেগালিথ পাথর, কুমিল্লার সতেরো রত্ন মন্দির, চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার এবং এমনি আরও কিছু ইমারত ও স্থান।

কাজ : বগুড়ার মহাস্থান গড়ে প্রাপ্ত ৫টি প্রাচীন শিল্পকর্মের নাম লেখ।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment