Site icon Drawing Gurukul [ ড্রয়িং গুরুকুল ] GOLN

মাটির ফলকের নকশা

মাটির ফলকের নকশা

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় মাটির ফলকের নকশা ,যা বিভিন্ন মাধ্যমের শিল্পকর্ম অধ্যায় এর অন্তর্ভুক্ত।

মাটির ফলকের নকশা

পোড়ামাটির ফলকে শিল্পকর্মের জন্য আমাদের দেশ এক সময় খুবই বিখ্যাত ছিল। দেশের প্রাচীন শিল্পকর্মের যেসব নিদর্শন আমরা এখনও দেখতে পাই, বলতে গেলে তার প্রায় সবকিছুই পোড়ামাটির ফলকচিত্রের মধ্যে পড়ে।

পাহাড়পুর ও ময়নামতির বৌদ্ধবিহারে প্রাপ্ত ফলকচিত্রে যেসব হাজার বছরের পুরনো শিল্পকর্মের নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায় তেমনি বগুড়ার মহাস্থানগড়, বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ, নওগাঁর কুসুম্বা মসজিদ ও দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দিরে প্রায় তিনশো বছর আগে পর্যন্ত,

 

 

ক্রমানুসারে পরবর্তী বিভিন্ন সময়ের শিল্পকর্মের নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায় পোড়ামাটির এই ফলকচিত্রের মধ্যেই। ছবি বা অন্য কোনো মাধ্যমে শিল্পকলা বিষয়ে প্রাচীন ঐতিহ্যের তেমন কোনো নিদর্শন আমরা দেখতে পাই না। এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছি আমাদের কাছে ঐতিহ্যগতভাবে পোড়ামাটির চিত্রের গুরুত্ব কত বেশি। তাহলে মাটির ফলকে একটি ছবি তৈরি করি।

উপকরণ ও হাতিয়ার লাগবে ফুলদানি তৈরি করার সময় বা ব্যবহার করেছি তাই। নতুনের মধ্যে এক সেন্টিমিটার পুরু স্কেলের মতো লম্বা দুটি কাঠের ভুল হলে কাজের সুবিধা হবে। মাটির ফলকে ছবি তৈরি করার আগে ছবিটি কাগজে এঁকে নিতে হবে।

মানুষ, পশু, পাখি আমাদের যা খুশি তা আঁকতে পারি। মাটির ফলকে যত বড় ছবি করব ঠিক তত বড় ছবি আঁকি। তরকারির ঝুড়ি মাথায় লুঙ্গি পরা একটি গাঁয়ের লোক আঁকি। খুব ভালো হবে। লোকটির চারপাশে কিছু জায়গা রেখে ছবির ফ্রেমের মতো বর্ডার দিই।

একটু পাতলা কাগজের ওপর কার্বন কাগজের সাহায্যে বর্ডারসহ ছবির একটি অনুলিপি বা কপি করে বর্ডার বরাবর মাটির ফলকে চিত্র ও নকশা তৈরির কিছু নমুনা চারদিকে কেটে রাখি। এবার পাঁচ ছয় সেন্টিমিটার ব্যাসের এক দলা নরম মাটি নিই।

 

 

সিমেন্টের মেঝের ওপর কিংবা পিঁড়ির ওপর রেখে প্রথমে হাত দিয়ে চেপে একটু চ্যাপ্টা করে নিই। বেলোন অথবা বাঁশের চোঙা দিয়ে এই চ্যাপ্টা করা মাটি বেলে, এক সেন্টিমিটার পুরু রুটির মতো মাটির ফ্ল্যাব বা ফলক তৈরি করি। মাটি বেলার সময় এক সেন্টিমিটার পুরু কাঠের রুল দুটি মাটির দুপাশে বসিয়ে, তার ওপর আমার ছবির কার্বন কপি বসাই।

স্কেল ধরে কাগজের বর্ডার- বরাবর ছুরির মাথা দিয়ে চারদিকেরও বাড়তি মাটি কেটে দিই, এবার চোখা করে কাটা পেনসিলের মাথা হালকাভাবে ছবির ওপর দিয়ে চাপিয়ে যাই, যাতে নিচের মাটিতে হালকা দাগ পড়ে। সম্পূর্ণ ছবির ওপর দিয়ে পেনসিল চালানো শেষ হয়ে গেলে কাগজটি মাটির ওপর থেকে তুলে নিই।

দেখি, মাটির ফলকের ওপর ছবির সুন্দর ছাপ পড়ে গেছে। প্রথম যখন মাটির কাজ শিখতে আরম্ভ করেছিলাম তখন নরম মাটির ঢেলা খালিহাতে চেপে, টেনে ও টিপে টিপে কীভাবে বিভিন্ন আকৃতির পুতুল, হাতি, ঘোড়া তৈরি করেছি তা আমাদের মনে আছে। এখন মাটির ফলকে ছবি তৈরির সময় তোমার সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হবে।

মাটির ফলকের ওপর তরকারির ঝুড়ি মাথায় লুঙ্গি পরা গাঁয়ের লোকটির ছবি কেমন সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। ছবি তৈরির কাজ কিন্তু এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি। ছবিটি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খুব ভালো করে দেখি ।

কোথাও একটু মাটি লাগিয়ে কিংবা লাগাতে হলে জায়গাটা পানি দিয়ে একটু স্যাঁতসেঁতে করে মাটি লাগাই। গড়ন ঠিক করার পর ছবির চারদিকে ফলকের কিনারা বরাবর দুই সেন্টিমিটার চওড়া ও প্রায় এক সেন্টিমিটার উঁচু করে মাটি বসিয়ে ফ্রেমের মতো করি। এবার বাঁশের ছুরি দিয়ে খুব সাবধানে একটু একটু করে চেঁছে ফ্রেমসহ ছবিটিকে মসৃণ করে নিই।

মসৃণ করার পর ছুরির চোখা মাথা দিয়ে খোদাই করে লোকটির চোখ, মুখ ও লুঙ্গির চেক এঁকে দিই। মাথার ঝুড়িতে ও কয়েকটি আঁচড় দিয়ে বুনন দেখাতে পারি ।

 

 

মাটির ফলকে ছবি তো তৈরি করলাম। এবার ছবিটাকে ঝুলানোর একটা ব্যবস্থা করা দরকার। মাটি দিয়ে হাতের আঙ্গুলের মাথার সমান দুটি মালা তৈরি করি। ঝাড়ুর শলা বা এরকম সরু কিছু দিয়ে মালার ভেতরে মোটা সুতা ঢোকাবার মতো ছিদ্র করি। মালা দুটির এক পাশ সামান্য কেটে একটু সমান করে নিই।

এবার ছবির পেছন দিকে ওপরে দুই কোনায় মালা দুটি বসিয়ে ভালো করে জোড়া দিই। মালা দুটির ছিদ্র যেন বন্ধ না হয় এবং লম্বালম্বিভাবে বসে। মালা দুটির ভেতর দিয়ে শক্ত সুতা পরিয়ে এ ছবি দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখতে পারি আবার কোনোকিছুর সাথে ঠেস দিয়ে কোনো মানানসই জায়গায় দাঁড় করিয়ে রাখতে পারি। যেভাবেই রাখি খুব সুন্দর দেখাবে।

মাটি দিয়ে কিছু পাত্র ও ফলকচিত্র তৈরি করা তো শেখা হলো। মাটির তৈরি এসব জিনিস ভালো করে শুকিয়ে পোড়ানোর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। ছায়ায় রেখে ধীরে ধীরে শুকোতে হবে তা তো জানা আছে। এতে সময় লাগবে সত্যি কথা, কিন্তু বাঁকা হওয়ার বা ফেটে যাওয়ার ভয় থাকে না। ভালো করে শুকাল কি না, তা বুঝব কী করে?

একটা শুকনো জিনিস হাতে নিয়ে তার তলায় বা পেছনের দিকে নখ দিয়ে একটু আঁচড় দিলে যদি দেখি আঁচড়ের জায়গাটা সাদাটে হয়ে গেছে তাহলে বুঝবো জিনিসটি ভালোভাবেই শুকিয়ে গেছে। তা না হলে আরও শুকাতে হবে।

শুকনো জিনিস ভেজা হাতে ধরলে বা পানি লাগলে ফেটে যাবে তাই খুব সাবধান থাকব । আশেপাশে কোথাও কুমারবাড়ি থাকলে কুমারদের কাছ থেকে আমাদের তৈরি জিনিসগুলো পুড়িয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারি। তা না হলে কাঠের ভুসি অথবা ধানের তুষ দিয়ে নিজেই পোড়াতে পারি ।

 

আরও দেখুনঃ

Exit mobile version