Site icon Drawing Gurukul [ ড্রয়িং গুরুকুল ] GOLN

মাটির কয়েল নিয়ে মসৃণ পাত্র তৈরি

মাটির কয়েল নিয়ে মসৃণ পাত্র তৈরি

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় মাটির কয়েল নিয়ে মসৃণ পাত্র তৈরি ,যা বিভিন্ন মাধ্যমের শিল্পকর্ম অধ্যায় এর অন্তর্ভুক্ত।

মাটির কয়েল নিয়ে মসৃণ পাত্র তৈরি

মাটি দিয়ে কয়েল কীভাবে তৈরি করতে হয় তা তো আমরা জানি। পাত্র তৈরির কাজ আরম্ভ করার আগে কাগজে পাত্রটির ছবি ও নকশা এঁকে নিই। পাত্রটি যত বড় হবে ছবি ও নকশা ঠিক তত বড় করে আঁকব।

তাতে কাজের সময় কিছুক্ষণ পরপর মাপ ও গড়ন নকশার সাথে মিলিয়ে দেখতে সুবিধা হবে। এবার কী ধরনের পাত্র তৈরি করব তা ঠিক করে নিই। একটা ফুলদানি করি, তবে সাদামাটা চোঙার আকৃতি নয়।

 

 

ফুলদানির গড়ন নিচের দিক থেকে আস্তে আস্তে মোটা হয়ে ওপরের দিকে উঠবে। বেশ উঁচু হওয়ার পর আবার ছোট হয়ে একটা গলার মতো হবে। মুখের ব্যাস হবে পলার থেকে সামান্য বেশি। সব মিলিয়ে ফুলদানিটির গড়ন হবে লম্বাটে। গলায় একটা মালা এঁকে দিলে বেশ লাগবে। ফুল-দানির ছবি ও নকশা এঁকে নিই, তারপর তৈরির কাজ আরম্ভ করি।

প্রথমে পরিমাণমতো মাটি বেলোন অথবা বাঁশের চোঙায় বেলে এক সেন্টিমিটার রুটির মতো তৈরি করে নকশার মাপ অনুযায়ী ফুল-দানির তলার জন্য কাটি। এবার মাপমতো একটি মাটির কয়েল তৈরি করে ডলার কিনারা বরাবর বসাই। বসাবার আগে কয়েলের নিচ ও তলার কিনারা পানি দিয়ে স্যাঁতসেঁতে করে নিতে ভুলব না।

প্রথমে কয়েলের বাইরের দিকে বাম হাতের মাঝের আঙ্গুল দিয়ে হালকা চাপ রেখে ডান হাতের তর্জনীর মাথা দিয়ে একটু একটু করে ভেতরের দিকের মাটি নিচের দিকে টেনে নামিয়ে তলার সাথে কয়েনটি জোড়া দিই। কয়েল যেন সম্পূর্ণ গোল থাকে।

এবার বাম হাতের মাঝের আঙ্গুলটি কয়েলের ভেতরের দিকে বসিয়ে ডান হাতের তর্জনীর মাথা দিয়ে কয়েলের বাইরের দিকের মাটি টেনে নামিয়ে ডলার সাথে জোড়া নিই। কয়েলটি ভেতর-বাহির দুদিকেই তলার সাথে যুক্ত হয়ে গেল।

নকশা দেখে মাপ অনুযায়ী দ্বিতীয় কয়েল তৈরি করে প্রথম কয়েলের ওপর বসাই এবং একই নিয়মে ভেতর ও বাইরের মাটি টেনে নামিয়ে তলার সাথে জোড়া দিই। কয়েলটি ভেতর-বাহির দুদিকেই তলার সাথে যুক্ত হয়ে গেল। নকশা দেখে মাপ অনুযায়ী দ্বিতীয় কয়েল তৈরি করে প্রথম কয়েলের ওপর বসাই এবং একই নিয়মে ভেতর ও বাইরের মাটি টেনে নামিয়ে জোড়া দিই।

এভাবে একটির ওপর আরেকটি কয়েল বসিয়ে নকশা অনুযায়ী ফুলদানিটি তৈরি করি। কয়েকটি কয়েল বসানোর পর এক এক বার কাঠের মডেলিং টুল দিয়ে টেনে ও ঘষে ফুল-দানির ভেতরের ও বাইরের অসমান মাটি সমান করে নেব।একটি বিষয়ে অবশ্যই খুব সজাগ থাকতে হবে, তা হলো প্রত্যেকটি কয়েল তৈরির সময় নকশা অনুযায়ী মাপ দেখে নিতে হবে।

নিচ থেকে প্রত্যেকটি কয়েলে ব্যাস একটু একটু করে বেড়ে বেড়ে ওপরের দিকে উঠেছে আবার একটু একটু করে কমে কমে গলার মাঝামাঝি গিয়ে একটু একটু বেড়েছে।

 

প্রত্যেকটি কয়েল বসানোর সময় জোড়ার জায়গাটা পানি দিয়ে অবশ্যই স্যাঁতসেঁতে করে নেব। গড়ন শেষ করার পর এবার ফুলদানিটি মসৃণ করার পালা।

লোহা কাটার করাতের ভাঙা টুকরো দিয়ে খুব সহজেই ফুলদানির বাইরের দিকটা মসৃণ করে নিতে পারি। করাতের কাঁটা-কাঁটা দিক দিয়ে চারদিক থেকে টেনে টেনে চেঁছে ফুল-দানির পায়ের উঁচু-নিচু মাটি প্রথমে সমান করে নিই। এবার করাতের টুকরোর সোজা দিকটা একটু কাত করে ধরে টেনে পাত্রের ওপরটা হালকাভাবে চেঁছে মসৃণ করি।

ভেজা স্পঞ্জ বা ফোম চিপড়ে নিয়ে তা দিেেয় স্যাঁতসেঁতে অবস্থায় পাত্রটির গা ঘষে দিই। দেখি পাত্রটি আরও মসৃণ হয়ে গেছে। সবশেষে ছুরির চোখা মাথা দিয়ে খোদাই করে ফুলদানিটির গলার নিচে মালার মতো একটি অলঙ্কার এঁকে দিই। একটি কথা বলে রাখা প্রয়োজন- ফুলদানি তৈরির কাজ এক দিনে শেষ করতে না পারলে পলিথিন দিয়ে জড়িয়ে রাখব।

 

 

ফুলদানিটি এখন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ভালো করে লক্ষ করি। দেখব তৈরি ফুল-দানি হয়তো আমার আঁকা ছবি ও নকশার সাথে হুবহু মিলছে না। হয়তো গড়নে পার্থক্য হয়ে গেছে, কোথাও কোথাও বাঁকা হয়ে গেছে।

 

 

হোক না এরকম, তাতে কী আসে যায়? একটা ফুল-দানি যে তৈরি করতে পারলে সেটা কি কম কথা, কম আনন্দের? প্রথম প্রথম এরকম হবেই, ঘাবড়াবার কিছুই নেই। অনেকদিন চর্চার পর সবই ঠিক হয়ে যাবে।

তবে ধৈর্য ধরে কাজ করতে হবে। কয়েল পদ্ধভিতে যে কোনো আকৃতির যত খুশি বড় জিনিস তৈরি করতে পারব। সবার আগে প্রয়োজন পদ্ধভিটিকে ভালোভাবে আয়ত্ত করে নেওয়া। ছবির নকশা ও নমুনা দেখে পাত্রগুলো তৈরি করতে চেষ্টা করি।

 

আরও দেখুনঃ

Exit mobile version