আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় কাঠের পুতুল ,যা বিভিন্ন মাধ্যমের শিল্পকর্ম অধ্যায় এর অন্তর্ভুক্ত।
কাঠের পুতুল
কাঠ দিয়ে প্রথমে খুব সহজ একটা পুতুল তৈরি করি। ঝুড়ি মাথায় একটি নারী। এই পুতুলের জন্য ৩ সেমি. পুরু, ৩ সেমি. চওড়া ও ১৫ সেমি. লম্বা এক টুকরো নরম কাঠ নিই। কদম কিংবা শিমুল কাঠ এরকম কাজে খুব উপযোগী। ধারালো বাটালি দিয়ে ঠেলে ঠেলে প্রথমে কাঠের শির চারটি মেরে দিই।
এবার খুব সাবধানে আস্তে আস্তে কেটে যাই, যতক্ষণ না কাঠের টুকরোটি সরু বুলারের মতো আগাগোড়া সমানভাবে গোল হয়ে যায়। গোল করে কাটার পর কাঠের টুকরোটির ব্যাস হলো মোটামুটি ৩ সেমি, আর লম্বা রইল ১৫ সেমি.। স্কেল দিয়ে প্রথমে ঠিক সাড়ে সাত সেন্টিমিটার মেপে কাঠের চারপাশ ঘুরিয়ে দাগ দিই।
দাগের ওপরে নিচে দুপাশেই সাড়ে সাত সেন্টিমিটার করে কাঠটি দুভাগ হয়ে গেল। এবার মাঝের দাগ থেকে ওপরের দিকে প্রথমে সাড়ে তিন সেন্টিমিটার তারপর আর আড়াই সেন্টিমিটার মেপে চারদিক ঘুরিয়ে দাগ দিই। দেখি, পেনসিলের দাগ দিয়ে কাঠটি মোট চারভাগে ভাগ হয়ে গেল।
প্রথম ভাগে দেড় সেন্টিমিটার এবং চতুর্থ ভাগে সাড়ে সাত সেন্টিমিটার। লোহা কাটার করাত বা ‘হ্যাক-স্য’ দিয়ে পেনসিলের সব কয়টি দাগ বরাবর কাঠের চারদিকে ঘুরিয়ে সামান্য গভীর করে কাটি। কাটার গভীরতা যেন চারদিকেই সমান হয়।
ছবিটি ভালো করে লক্ষ করি এবং ছবিতে প্রদর্শিত নিদর্শন অনুযায়ী ধারালো বাটালি দিয়ে ঠেলে কাঠের চারদিক ঘুরিয়ে খাঁজ কাটি। খাঁজ কাটার জন্য প্রয়োজন হলে ধারালো ছুরিরও ব্যবহার করতে পারি। সব কয়টি খাঁজ কাটা হয়ে গেলে মোটামুটিভাবে একটি পুতুলের আদল এসে গেছে। ঝুড়ি মাথায় কোনো নারীর মতো।
শিরীষ কাগজ দিয়ে ঘষে পুতুলটিকে মসৃণ করি। মসৃণ করার পর ঝেড়ে মুছে পুতুলটিকে পরিষ্কার করে নিই যাতে এর গায়ে কাঠের কোনো কণা বা ধুলা লেগে না থাকে।
ছুতোর মিস্ত্রির কুঁদন যন্ত্ৰ (Turning implement) ব্যবহার করে এরকম একটি পুতুল পাঁচ-ছয় মিনিটের মধ্যেই তৈরি করা যায়। ভবিষ্যতে কোনোদিন এই যন্ত্রের ব্যবহার শিখতে পারলে খুব সহজে অল্প সময়ে এরকম অনেক কিছু তৈরি করতে পারব।
এবার পুতুলটি রং করার পালা। কী কী রং লাগাব পুতুলের গায়ে? পুতুলের মুখে ও শরীরে হালকা হলুদ রং, শাড়ির জন্য লাল রং, শাড়িতে সাদা রঙের নকশা আর কালো ও সাদা রং মিলিয়ে পাড়। তারপর কালো রং দিয়ে চুল, নাক ও চোখ, লাল রং দিয়ে ঠোঁট আর বাদামি রঙের ঝুড়ি।
পরে আরও কিছু পুতুল তৈরি করে আমাদের পছন্দমতো বিভিন্ন রং লাগাতে পারব। সবুজ শাড়ি, নীল শাড়ি, বেগুনি শাড়ি কতরকম রং লাগানো যাবে! অন্য কোনো রং লাগাবার আগে পুতুলের সারা শরীরে হালকা হলুদ রং লাগিয়ে ভালো করে শুকিয়ে নেবার পর শাড়ি, চুল ও চোখ-মুখের রং দেব।
রং করার জন্য মোটা ও সরু দুরকমের ভুলি ব্যবহার করব। মোটা তুলি দিয়ে ঝুড়ি, চুল, মুখ, শরীর ও শাড়িতে রং লাগানোর পর সরু তুলি দিয়ে নাক, চোখ, ঠোঁট, শাড়ির পাড় ও নকশা আর ঝুড়ির বুনন আঁকব।
সরু তুলি দিয়ে সব কাজ করতে গেলে রং সমানভাবে লাগবে না। কোঁটার চাইনিজ লেকার বা এনামেল রং বেশি ঘন হলে সামান্য তারপিন মিশিয়ে একটু পাতলা করে নেব কিন্তু বেশি পাতলা করব না। রং করা শেষ হলে দেখব সুন্দর একটা পুতুল তৈরি হয়েছে।
আরও দেখুনঃ