আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় কাঠের নকশা ,যা বিভিন্ন মাধ্যমের শিল্পকর্ম অধ্যায় এর অন্তর্ভুক্ত।
কাঠের নকশা
কাঠ কেটে তৈরিকৃত নকশা বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যায়। একবার নকশা কাটার কৌশলটা আয়ত্ত করতে পারলে তা প্রয়োগ করে হরেক রকম জিনিস তৈরি করতে পারব। নকশা কেটে যেমন ঘরের সাজসজ্জার জিনিস তৈরি করতে পারব তেমনি আসবাবপত্র, দরজার প্যানেল ও অন্যান্য ব্যবহার্য জিনিসের শোভাবর্ধনের কাজেও ব্যবহার করতে পারব।
কাঠ কেটে নকশা তৈরি করার আগে নকশাটি কাগজে এঁকে নিতে হবে। যত বড় নকশা তৈরি করতে চাই ঠিক তত বড় করে পছন্দমতো একটি নকশা আঁকি। প্রথম প্রথম একটু মোটা ধরনের নকশা দিয়ে কাজ আরম্ভ করি।
কাজের কৌশল আরম্ভ করার পর ক্রমে ক্রমে অনেক সুর নকশাও তৈরি করতে পারব। নকশার ভেতরের ও বাইরের অপ্রয়োজনীয় কাঠ কেটে ফেলে দিয়ে নকশা তৈরি করতে হবে।
অসাবধানতাবশত যাতে নকশার কাঠ কাটা না পড়ে তার জন্য নকশার ভেতরের অপ্রয়োজনীয় এলাকা পেনসিল বা বলপেনের রেখা দিয়ে ভর্তি করে দিলে অপ্রয়োজনীয় অংশ সহজে চোখে পড়বে, ভুল হওয়ার সম্ভবনা থাকবে না।
নকশা কাটার জন্য তিন বা চার পরত -এর ভালো প্লাইউড অথবা মোটামুটিভাবে আধা সেন্টিমিটার পুরু ভালো নরম কাঠ নিই। শিরীষ কাগজ দিয়ে ঘষে কাঠের দুপিঠ সামান্য মসৃণ করি। কার্বন কাগজ বসিয়ে কাঠের ওপর কাগজে আঁকা নকশার ছাপ তুলি।
বলপেনের রেখা দিয়ে ভর্তি করে নকশার ভেতরের অপ্রয়োজনীয় এলাকা চিহ্নিত করি। সরু তুরপুন দিয়ে অপ্রয়োজনীয় এলাকার প্রত্যেকটিতে এর সীমারেখার খুব কাছাকাছি জায়গায় ‘ফ্রেট-স্য’ ঢোকাবার জন্য একটি করে ছিদ্র করে নিই। আয়োজন সবই শেষ হলো। এবার নকশা কাটার পালা।
শিল্পকলা শিক্ষকদের কাছ থেকে ‘ফ্রেট-স্য’ ব্যবহার করার নিয়ম ভালো করে জেনে নেব। ‘ফ্রেট-স্য’ খুব পাতলা কাঠে নকশা নির্মাণের জন্য ফ্রেমে আঁটা অতি সরু করাত বিশেষ। ফ্রেমে আঁটা করাতটি ফ্রেম থেকে খোলা যায়, আবার ফ্রেমে আটকানো যায়, খুব টান করা যায়, একটু ঢিলেও করা যায় ।
দুপাশে কান লাগানো নাট ঘুরিয়ে এসব করা যায়। এবার নকশা কাটতে চেষ্টা করি। করাতের সামনের মাথা ফ্রেম থেকে আলগা করে কাঠের অপ্রয়োজনীয় এলাকার একটি ছিদ্রের ভেতর দিয়ে ঢুকিয়ে মাথাটি আবার ফ্রেমে আটকিয়ে নিই। নাট ঘুরিয়ে করাতটি যথাসম্ব টান করে নিই।
মাত্রাতিরিক্ত টান করতে গেলে করাত ছিঁড়ে যেতে পারে, আবার ঢিলে থাকলে কাঠ কাটার সময় ভেঙে যেতে পারে। তাই খুব সাবধানে কাজ করব। এবার অপ্রয়োজনীয় এলাকার সীমারেখা বরাবর ‘ফ্রেট-স্য’ চালিয়ে অপ্রয়োজনীয় অংশটি কেটে আলাদা করে ফেলি।
একটি অংশ কাটা শেষ হলে করাতের মাথা ফ্রেম থেকে আলগা করে করাতটি বের করে আনি এবং আরেকটি অপ্রয়োজনীয় অংশের ছিদ্র দিয়ে ঢুকিয়ে আটকিয়ে নিই। এভাবে প্রত্যেকটি অপ্রয়োজনীয় অংশ কাটার পর নকশার বাইরের সীমারেখা বরাবর ‘ফ্রেট-স্য’ চালিয়ে পুরু নকশাটি কেটে বের করে ফেলি। নকশা তৈরি হলো।
এবার শিরীষ কাগজ দিয়ে ঘষে অমসৃণ জায়গাগুলো ও একটি পিঠ ভালোভাবে মসৃণ করে নিই। কাঠের রং বাজায় রেখে স্বচ্ছ বার্নিশের প্রলেপ দিয়ে নিই। নকশাটি গৃহ সজ্জার কাজে বা আসবাবপত্রের শোভাবর্ধনের জন্য ব্যবহার করা যাবে।